Popular Posts

Tuesday, July 26, 2011

অজ্ঞতাই মুসলিম নামধারী বুদ্ধিজীবীদের ইসলাম বিদ্বেষের আদি উৎস

যারা রাজনীতি ও ধর্মকে আলাদা আলাদাভাবে দেখতে চান তারা হয়তো রাজনীতি এবং ধর্ম উভয়টাই সম্পর্কে অজ্ঞ, নয়তো জেনে বুঝে আবু লাহাবীদের মতো বাড়াবাড়ি করছেন তারা ধর্মকে মসজিদ, কুরআন তেলাওয়াত ও যিকিরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান তারা ধর্ম মানতে রাজী কিন্তু রাজনীতিতে ধর্মের বর্তমান থাকাটা মেনে নিতে পারছেন না কিন্তু যারা একবারও ভেবে দেখেছেন কি, স্রষ্টা আপনাদের খেয়াল খুশিমতো চলার জন্যই আপনাদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত করে পাঠাননি আল্লাহ পাক আপনাদের পথ প্রদর্শক হিসেবে জগতের মূর্ত প্রতীক রূপে প্রেরণ করেছেন শেষ নবীকে এবং এ সম্পর্কে যাবতীয় পূর্ণাঙ্গ বাণী পেশ করেছেন সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থা সম্বলিত আল কুরআন আপনারা নবী (সা.) কে নবী রূপে বরণ করে নিলেন কিন্তু তাঁর জীবনটাকে পর্যালোচনা করার সাধ কি আপনাদের অন্তরে একবারও জাগে না আমাদের পেয়ারা নবী হুজুর পাক (সা.) তো মসজিদে বসে বসে কেবল নামাযেই রত থাকতেন না কিংবা অন্যকে এ উপদেশ দিয়েই ক্ষান্ত থাকতেন না পাশাপাশি তিনি মসজিদে বসে সুদ, ঘুষ, জেনা, হিংসা-দ্বেষ প্রভৃতি সমাজ হতে উৎপাটনের বিধান শুনাতে, পারিবারিক বিচার করতেন, রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি নির্ধারণ করতেন তাকে মহান প্রভু যদি মাত্র ধর্মের দায়িত্বই দিতেন তার কার্যধারা আল্লাহর একাত্ম ঘোষণার মাঝেই সীমিত থাকতো তাঁকে করতে হতো না যুদ্ধ, দিতে হতো না রক্ত
এ দেশের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের ইসলাম বিরোধিতা আমরা লক্ষ্য করে আসছি ইসলাম শব্দটাতেই এদের এলার্জি এরা যে সব ধর্মের ব্যাপারেই এলার্জিক এমন নয় হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাপারে এরা মোটেই সমালোচনা মুখর নয় এমনকি খৃষ্টধর্মের প্রতিও এদের তেমন বিরূপ বলে মনে হয় না অথচ এরা মূলত মুসলিম নামধারী কেউ কেউ ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারেও জন্মেছেন কিন্তু মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়াটাকে এরা কোনো গৌরবের বিষয় হিসেবে গণ্য করেননি বরং এর জন্য তাদের মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতাই লক্ষ্য করা গেছে এদের স্ত্রী বা পুত্র কন্যাদের মধ্যেও মুসলিম হিসেবে আদৌ কোন গৌরববোধ নেই
পোশাক-আশাকে বা চালচলনে এরা বরং নিজেদের বাঙ্গালী সংস্কৃতির ধারক-বাহক প্রমাণ করতে গিয়ে নিজেদের পারিবারিক আবহাওয়া থেকে মুসলমানদের জন্মগত পরিচয় চিহ্নগুলো ত্যাগ করতেই প্রয়াসী বলে মনে হয়েছে যেন মুসলিম ঐতিহ্যগত চিহ্নসমূহ শরীরে এবং পোশাক-পরিচ্ছদে রাখলে তিনি আর বাঙ্গালী  হতে পারেন না তাদের কাছে দাড়ি, টুপি, নামায, রোযা, হজ্ব বা যাকাত এই সবই অর্থহীন কর্মকান্ড মাত্র হাস্যকর বলে ধারণা অথচ এইসব ব্যক্তিদের অনেকেই নামের আগে সৈয়দ লিখতে খুব পছন্দ করেন সুপরিচিত ইসলাম বিদ্বেষীদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা নামের আগে ভুলক্রমে সৈয়দ' না লিখলে দারুণ ক্ষুব্ধ হন তারা যখন ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে মুসলিম সংস্কৃতির বিরুদ্ধে পত্র-পত্রিকায় প্রবন্ধাদি লেখেন তখন মুদ্রিত নামের আগে সৈয়দ' শব্দটা জ্বলজ্বল করে তারা বোঝাতে চান তারা মুসলিম পরিবারের মতো খারাপ পরিবেশে জন্মালেও খুবই উঁচু বংশে জন্মেছেন তারা সাধারণ মানুষ নন অসাধারণ মানুষ বলেই তারা এখন আর মুসলমান থাকতে রাজি নন
এই ধরনের সাংস্কৃতিক বিভ্রান্তিতে অন্ধ কতিপয় দিকভ্রান্ত বুদ্ধিজীবীই এখন বাংলার ইসলামী আন্দোলন এবং পবিত্র কুরআনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন যদি একটু পরীক্ষা করে দেখা যায় তবে দেখা যাবে এরা ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে জন্মালেও শিশুকাল থেকেই এরা ছিলেন ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষা থেকে গাফেল এদের অধিকাংশের বাল্যে কোনো ধর্মীয় শিক্ষা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি শিশুকালে কেউ তাদের পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত বা সূরাও পড়ায়নি কেউ বাল্যে এদের কিভাবে নামাযে দাঁড়াতে হয় শেখায়নি নামায এরা জানে না বলেই এর মাহাত্ম্য বুঝে না এদের প্রকৃতপক্ষে কোন প্রার্থনা পদ্ধতি জানা না থাকায় তারা প্রার্থনা করে না অথচ এদের সবাই যে নাস্তিক এমনও নয় তারা নামায জানলে নামায আদায় করতেন কিন্তু জানেন না বলে লজ্জায় এখন আর কারো কাছে গিয়ে শিখতে পারেন না অথচ অনেকেরই প্রাণ আল্লাহর মসজিদে গিয়ে সবার সাথে সিজদায় লুটিয়ে পড়তে আকুলি-বিকুলি করে
আমি এমন অনেক ধর্মনিরপেক্ষ ইসলাম বিদ্বেষী মুসলমানকে জানি, যিনি রমযান মাসে নিষ্ঠার সাথে রোযা পালন করেন এবং তারাবির জামায়াতে নামায না জানা সত্ত্বেও শরীক হয়ে রুকু-সিজদা করে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের চেষ্টা করেন রোযা রাখাটা তাদের কাছে তেমন কষ্টকর তো নয়ই বরং সোজা কারণ, রোযা রাখাটা অন্যের কাছে তালিম না নিয়েও করা যায় তালিম নিতেই লজ্জা বাল্যে পাড়ার মসজিদে তালিম পেলে আজ তাদের মুখ লুকিয়ে থাকতে হতো না এজন্য তাদের ঐতিহ্যবাহী পরিবারই দায়ী ছেলেমেয়েকে প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় শিক্ষার, কমপক্ষে অন্তত নামাযে পড়া যায় সেটুকু শিক্ষা দেয়ারও প্রয়োজন কেউ বোধ করেনি বলে আজ তারা নাস্তিক ও মুরতাদে পরিণত হতে দ্বিধা করছেন না জানেন না বলেই বিরূপতা
এ প্রবন্ধে আমাদের বক্তব্য হলো অজ্ঞতাই মুসলিম নামধারী ইসলাম বিদ্বেষী বুদ্ধিজীবীদের ধর্মদ্রোহের আদি উ একটু অনুসন্ধান করলেই জানা যাবে যে, এসব আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত লোক এদেশে ইসলামী আন্দোলনের ঘোর বিরোধী তাদের জন্ম ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে হলেও তাদের শৈশবে তারা কোন ধর্মীয় শিক্ষা পাননি তাদের অভিভাবকগণ একজন মুসলিম হওয়ার চেয়ে একজন আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত সফল মানুষ হিসেবেই সন্তানকে গড়ে তুলতে আগ্রহী ছিলেন এ জন্যই তাদের সব থাকলেও প্রকৃতপক্ষে কোন ধর্ম নেই আর পাশ্চাত্য শিক্ষার গুণেই তাদের মধ্যে রয়েছে চরিত্র ও আদর্শগত বাস্তব জীবনের ভেতর নৈতিক শৈথিল্যের প্রতি অন্ধ সমর্থন তারা নারীকে পরিবারের ভেতর শান্তিপূর্ণ কর্তব্য পালনে রত দেখতে চান না চান নারী তার স্বাভাবিক লজ্জাশীলতা ত্যাগ করে বাইরে এসে অন্য কাজ করুক
আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এদেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ ইসলাম সম্বন্ধে আক্ষরিক অর্থেই অশিক্ষিত তাদের অধিকাংশ নর-নারীই পবিত্র কুরআনের শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক দিক-দর্শন সম্বন্ধে কোনদিন অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হননি এখন যেখানে বিশ্বব্যাপী ইসলাম সম্বন্ধে দারুন কৌতূহল জেগে উঠেছে, তখনও এরা না জেনেই ইসলামী আন্দোলনের বিরোধিতা করতে বদ্ধপরিকর অথচ অনেকেরই ধারণা এই বুদ্ধিজীবীরা সঠিকভাবে ইসলামকে জানলে তারাই হতেন ইসলামী আন্দোলনের সবচেয়ে সহায়ক শক্তি
আমরা মনে করি, বুদ্ধিজীবীদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানই হবে এখন ইসলাম কায়েমের প্রাথমিক পদক্ষেপ জানি না কে নিতে পারে এ দায়িত্ব কেবল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ঘাড়ে এ দায়িত্ব চাপিয়ে বসে থাকলে আর চলছে না কারণ, এখানে ইসলাম বিরোধীদের আত্মসম্মানেরও একটা ব্যাপার আছে তারা সারাজীবন ইসলামের বিপক্ষে কথা বলে এসেছেন এখন তাদেরই যদি আমরা ইসলামের প্রবক্তা করে তুলতে চাই তবে ইসলামী চিন্তায় অগ্রসর প্রত্যেক বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিক, শিল্পীকে ইসলামী আন্দোলনের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে পরিকল্পনামাফিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে আর আলেম সমাজকে বুদ্ধিজীবীদের প্রতি করে তুলতে হবে সহনশীল ও নমনীয় সমস্ত মান-অভিমান ত্যাগ করে অগণ্য ব্যক্তিদের কাছেও যদি ইসলামের দাওয়াত বৈপ্লবিক পন্থায় পৌঁছানো যায়, কেন জানি আমার মনে হয় বাংলা বুদ্ধিজীবীদের ইসলাম বিরোধিতা অচিরেই অবসন্ন হয়ে পড়বে

No comments:

Post a Comment